Fifty Inspirational Quotes: একটি সুন্দর উক্তি রত্নের চেয়েও মূল্যবান। হতাশা, ব্যর্থতা, গ্লানির তিক্ত অনুভূতিগুলো যখন ঘিরে ধরে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্বল হয় একটু আশা, একটুখানি সম্ভাবনার হাতছানি। জীবনের কঠিন সময়গুলোতে তোমার মনোবল ধরে রাখতে হৃদয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে এই চল্লিশটি বিখ্যাত উক্তি।
Contents
স্বপ্ন নিয়ে উক্তি: Fifty Inspirational Quotes
১) স্বপ্ন দেখতে জানলে জীবনের কাঁটাগুলোও ধরা দেয় গোলাপ হয়ে। — Theodore Zeldin
২) তুমি যদি এখন থেকেই তোমার স্বপ্নগুলো সত্যি করার পেছনে ছুটে না চলো, একদিন তোমাকে কাজ করতে হবে অন্যদের অধীনে- তাদের স্বপ্নগুলো সত্যি করার জন্য। — Anonymous
৩) তোমার স্বপ্ন আর এর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে কেবল একটি মাত্র জিনিস- সেটি হচ্ছে অজুহাত! যে মুহূর্ত থেকে তুমি নিজেকে অজুহাত দেখানো বন্ধ করে কাজ শুরু করবে তুমি সে মুহূর্ত থেকে তোমার স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকবে না- সেটি বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করবে! — Jordan Belfort
জীবন নিয়ে উক্তি:
৪) জীবনকে ভালবাসতে শিখুন। ভালবাসতে ভালবাসুন। ভালবাসায় কিছু না কিছু উন্মাদনা থাকবেই। কিন্তু সব উন্মাদনায়ই কিছুটা আন্তরিকতা মিশে থাকে। — Petrach
৫) দুঃসময়ের অন্ধকার কালো কখনো কখনো আমাদের জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্তটির দ্বার খুলে দেয়। —Anonymous
৬) জীবন মানে নিরন্তর ছুটে চলা.. পদে পদে বাধা-বিপত্তি থাকবে, প্রতিকূলতায় রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হতে হবে, সে ক্ষত মুছে আবার প্রবল আগ্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়া.. সংগ্রাম এবং সাফল্য – এই তো আসল জীবন! — Roy T. Bennett
৭) আমরা অনেকসময়ই ভুলে যাই একটু আন্তরিকতার ছোঁয়া, একটু প্রাঞ্জল হাসি, কিছু সুন্দর কথাবার্তা, সুন্দর ব্যবহারের কী অসম্ভব রকমের ক্ষমতা রয়েছে একটা মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার! — Anonymous
৮) বাঁচার মতো বাঁচতে জানলে জীবনটা অসম্ভব রকমের রোমাঞ্চকর একটি অভিযান, আর একদম ঝুঁকিহীন জীবন সে তো মুরগির খোঁয়াড়ে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকা, আর মরে যাওয়া। — Anonymous
৯) ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কি কেটে যাবে একটি জীবন? জীবনটা হোক কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর, অবিরাম ছুটে চলার নিরন্তর অনুপ্রেরণা। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তো কবরের জীবন চিরকাল পড়ে রয়েছেই। — হযরত আলী (রাঃ)
১০) জীবনটা উপভোগ করতে হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতি আনন্দে উপলক্ষ্যে। যত বেশি হাসবে, যত কম অভিযোগ করবে, জীবনটা ততোই ভরে উঠবে সুখে, পরিতৃপ্তিতে। —Anonymous
পরিশ্রম নিয়ে উক্তি:
১১) প্রত্যেকের জীবনের একটা গল্প আছে। অতীতে ফিরে গিয়ে গল্পের শুরুটা কখনো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তুমি গল্পের শেষটা চাইলেই নতুন করে সাজিয়ে তুলতে পারো। — Chico Xavier
১২) লক্ষ্যের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও যখন ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ পেতে হয়- তাতে দুঃখের কিছু নেই। এই কঠোর পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে তুমি হয়ে উঠেছ আরো শক্তিশালী, আরো অভিজ্ঞ, আরো দক্ষ- এটাই তো সত্যিকারের বিজয়! — Anonymous
১৩) তোমার মেধার ঘাটতি থাকতেই পারে, কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি পরিশ্রম অন্য কেউ করবে সেটি তো কখনই হতে দেওয়া যায় না- পরিশ্রম দিয়ে তোমার মেধার ঘাটতি অবশ্যই পুষিয়ে নেওয়া যায়, আমিই তার বাস্তব উদাহরণ! — Derek Jeter
ভুল করা নিয়ে উক্তি:
১৪) তুমি ভুল করছো এতে বিন্দুমাত্র লজ্জার কিছু নেই। বারবার ভুল করাটা একটি জিনিসই প্রমাণ করে- তুমি কখনো হাল ছাড়োনি, তুমি অবিরাম চেষ্টা করে চলেছ। — Anonymous
১৫) জীবনে আমি হাজার হাজার ভুল করেছি, করছি, হাজারবার হোঁচট খেয়েছি, খাচ্ছি- এবং সেটি নিয়ে আমি গর্বিত! প্রত্যেকটি ভুল, প্রত্যেকবার হোঁচট খাওয়া আমাকে আবার গড়ে তুলেছে আরো শক্তিশালী, আরো পরিণত করে। — Drew Barrymore
আরো কিছু প্রেরণামূলক উক্তি:
১৬) কখনোই ভেঙে পড়ো না। পৃথিবীর যা কিছু হারিয়ে যায়, তা অন্য কোন রূপে সেটি ঠিকই আবার ফিরে আসে জীবনে। — Rumi
১৭) জীবনে অনেক বিষয় আছে যেগুলো তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোরও মানে হয় না, কারণ এর বাইরেও তোমার হাতে হাজার হাজার জিনিস রয়েছে যেগুলো তুমি বিজয় করতে পারো! — Roy T. Bennett
১৮) জীবনটাকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য কখনো কখনো সব কিছু ছেড়েছুড়ে হারিয়ে যেতে হয়! — Erol Ozan
১৯) সহজে জেতার আনন্দ কোথায়? বাধা যত বিশাল, বিজয়ের আনন্দও ততোই বাঁধভাঙ্গা! — Pele
২০) ভয় পাওয়ায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু ভয় পেয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, তোমাকে উঠে দাঁড়াতে হবে, ফাইট দিতে হবে, হেরে গেলে আবার নতুন উদ্যমে সব শুরু করার উদ্যম থাকতে হবে। — Anonymous
২১) অন্যের ভালো দিকগুলো খুঁজতে গেলেই নিজের সেরাটা বের করে আনা যায়। — William Arthur Ward
২২) অভিজ্ঞতা- এই জিনিসটি কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটি পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু যতক্ষণ না নিজে অভিজ্ঞতাটি অর্জন করছো বিষয়টি তুমি সত্যিকার উপলব্ধি করতে পারবে না। — Anonymous
২৩) প্রত্যেকটি জিনিসেরই একদম নিজস্ব একটি সৌন্দর্য আছে। তুমি কি সেটি অনুভব করতে জানো? — Confucius
২৪) এই ঝলমলে রোদ যতদিন হাসবে, এই পাখির কলকাকলি, এই গাছের পাতায় হাওয়ার দোলায় ঝিরঝির শব্দ যতদিন আমি শুনবো, ভোরের খোলা হাওয়ায় বুকভরে শ্বাস নিতে পারবো- কি করে আমি জীবনকে ভালবেসে না থাকতে পারি? — Anne Frank
২৫) কখনো হাল ছেড়ে দিও না! এখনকার এই দাঁতে দাঁত চেপে করা কষ্টগুলো তোমাকে বিজয়ীর খেতাব দেবে সারাজীবনের জন্য। — Muhammad Ali
২৬) খুব শিগগির অসম্ভব চমৎকার একটা কিছু ঘটতে চলেছে তোমার জীবনে, তুমি কি সেটি অনুভব করতে পারো? — Anonymous
২৭) তুমি যখন সবাইকেই ভালবাসতে শিখবে, সবারই কল্যাণে কাজ করে যাবে- জীবনের শেষলগ্নে গিয়ে দেখবে মানুষের ভালবাসায় তুমি একদম আকণ্ঠ ডুবে আছো! বিশ্বাস করো এরচেয়ে বেশি পরিতৃপ্তি জীবনে আর কিছুতে হতে পারে না! — Anonymous
২৮) পৃথিবীর সুন্দরতম জিনিসগুলো হাতে ছোঁয়া যায় না, চোখে দেখা যায় না, সেগুলো একমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়- ভালবাসা, দয়া, আন্তরিকতা। — Helen Keller
২৯) সম্ভাবনা আর বিপদ হাতে হাত রেখে চলে। তাই বলে সম্ভাবনার দ্বার না খুললে কি চলবে? — Anonymous
৩০) যার নেশা এবং পেশা মিলে যায় তার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেই বা হতে পারে? — Anonymous
৩১) “তোমাকে কী বলা হচ্ছে”, সেটি হৃদয়েওঃ ধারণ করো, “কে বলছে” সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। পথের ভিখারীও কখনো কখনো তোমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিতে পারে। — Anonymous
৩২) ব্যর্থতা মানে হচ্ছে ব্যর্থতাই- কেন হয়েছে কার কারণে কি কারনে হয়েছে সেগুলো কেউ জানতে চাইবে না কখনো। তুমি ব্যর্থ হলে তার যন্ত্রণা তোমাকেই একদম একাকী সহ্য করতে হবে, কেউ তোমার পাশে এসে দাঁড়াবে না। তাই কখনোই অজুহাত বানাবে না, অন্যদের কেউ সুযোগ দেবে না তোমার জীবনটাকে নিয়ন্ত্রণ করার। জিততে অবশ্যই তোমাকে হবেই! —Anonymous
৩৩) বিশাল এই মহাজগতে ক্ষুদ্র বালুকণার চেয়ে ছোট্ট এ আমাদের পৃথিবী, তার মাঝে ক্ষণিকের এই জীবন- জগতের বুকে কি একটি আঁচড় না কেটেই হারিয়ে যাবে অতলে? — Anonymous
৩৪) দাম্ভিক হওয়া খুবি সহজ, বিনয়ী হতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন অসাধারণ আত্মসম্মান এবং মানসিক শক্তিমত্তার। —Anonymous
৩৫) এই পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের অনুভূতিটি হচ্ছে যখন তুমি একটি লক্ষ্যস্থির করেছিলে সেই লক্ষ্যটি পূরণ করতে পারলে! — Anonymous
৩৬) পৃথিবীটা হচ্ছে একটি স্বচ্ছ আয়নার মতো- তুমি সবার সাথে যেমন ব্যবহার করবে যেমন মনোভাব পোষণ করবে ঠিক তেমনটাই তুমি ফিরে পাবে প্রতিদানে। — Anonymous
৩৭) ব্যর্থ হওয়া মানে হেরে কিন্ত যাওয়া নয়, ব্যর্থতা নতুন করে আবার শুরু করার প্রেরণা যোগায়। তাই হাল ছেড়ে দেওয়া মানেই হেরে যাওয়া।
৩৮) তোমার জীবনটা একান্তই তোমার, তুমি কী হবে কী করবে কিভাবে কাটাবে সে ব্যাপারে অন্যরা পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু তাদের ইচ্ছা তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার কোন ধরনের অধিকার নেই কারো। কাউকে সেই সুযোগ দিতেও নেই কখনো। — Anonymous
৩৯) তোমার জীবনে সবকিছু একবার হলেও চেষ্টা করে দেখা উচিত। বিধাতা প্রতিটি মানুষকে কিছু না কিছু ক্ষেত্রে দারুন দক্ষতা দিয়ে পাঠিয়েছেন, তুমি সেটি কখনো জানতেও পারবে না যতদিন না তুমি সেটি চেষ্টা করে দেখছো, তাই সব কিছু একবার চেষ্টা করে দেখো। —Anonymous
৪০) হতাশা একটি বিলাসিতা মাত্র। হতাশার জায়গাটি আজ থেকে দখল করুক কাজ শেষের তৃপ্তিমাখা ক্লান্তিগুলো। —Anonymous
একটি সেরা উক্তিই পারে তোমার জীবনকে বদলে পুরোপুরি দিতে।
মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি:
১. পিতৃবিয়োগের পরের সময়টা অনেক কঠিন ছিল মাদার তেরেসার জন্য। তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে অনেক কষ্ট করে করে বড় করেন। তিনি ১৮ বছর বয়সেই ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন এবং যোগদান করেছিলেন সিস্টার্স অব লরেটো নামক এক মিশনারি সংস্থায়। তিনি ১৯৪৬ সালে ধর্মীয় কাজে ভারতের দার্জিলিং যাত্রাপথে তাঁর মধ্যে একপ্রকার গভীর উপলব্ধি আসে যাকে পরবর্তীতে তিনি “কল উইদিন দ্যা কল (Call within the call)” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এসময়ের মধ্যেই তাঁর মধ্যে দরিদ্রের মাঝে বেঁচে থাকার যে আকাঙ্ক্ষাগুলো, সেটির পরিস্ফুটন ঘটে। তিনি মনে করতেন সর্বদা দুস্থ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আমাদের প্রতি আদেশ এবং এই আদেশ অমান্য করা আসোলে ধর্মবিশ্বাসের অবমাননা করা। তিনি বলেন,
“তোমরা বাইরের পৃথীবিতে এখনি বেড়িয়ে পড়ো এবং ভালোবাসো সকল মানুষকে। তোমার এই উপস্থিতি সবসময় যেন হাজারো মানব হৃদয়ে নতুন আলোর সঞ্চার জাগায়।“
২. আমি এখন একটি ব্যাক্তিগত গল্প বলবো । সময়টা ছিল ২০১৩ কিংবা ২০১৪ এর। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন, বনশ্রীতে আইডিয়াল স্কুল অ্যাণ্ড কলেজে। সে সময়ে আমার স্কুলের কিছু ক্লাসমেট নিজের উদ্যোগে সামাজিক একটি সংঘ খুলেছিলো, নাম আলোড়ন, যার মূল কাজই হচ্ছে বনশ্রীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো হাজারো পথশিশু, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধীসহ আরো অনেক মানুষকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করা।
সাহায্যের তহবিলের জন্য তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় রোড ক্যাম্পিং করে টাকা উঠাতো। আমার তাই অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল আলোড়নে যোগ দেয়ার। তখন আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে আলোড়নের এসব উদ্যোগের কথা বলতেই সে আমাকে বলেছিলো “শুন, এভাবে একজন-দুইজন মানুষকে সাহায্য করে কী লাভ বল?এই দেশে যে হাজারো মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তার কী হবে? কিছু মানুষকে সামান্য একটা জামা কিনে না দিয়ে বরং বৃহত্তর উদ্যোগে কিছু করা উচিত।” এখন আমাদের সমাজে এরকম অনেক ঘটনাই দেখতে পাওয়া যায়। এইরকম ঘটনাগুলোকে তাই ইঙ্গিত করে মাদার তেরেসা বলেছিলেন,
“যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সমর্থ নাও হও, তাহলে অন্তত একজন মানুষকে হলেও সাহায্য করো।“
৩. ১৯৪৮ সালে মাদার তেরেসা গরীব ও সাহায্যের আশায় থাকা মানুষদের নিয়ে নিজের মিশনারি কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার মতিঝিল এলাকায়। এত বড় একটা উদ্যোগ নেয়ার পূর্বে তিনি কারোর জন্য অপেক্ষা করেননি। তাঁর মনে হয়েছে যে উদ্যোগ কারোর না কারোর তো ঠিকই নিতে হবে। কারোর আদেশ-উপদেশের বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে নিজ প্রচেষ্টাতেই সকল কাজ শুরু করার জন্য মাদার তেরেসার জীবনী ছিল অন্যতম দৃষ্টান্ত।
“সবসময় কারোর নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে আমাদের নিজ থেকেই সকল উদ্যোগ নেয়া উচিত।“
৪. তার শুরুর দিকে বিদ্যালয় পরিচালনা করার কাজটা একার পক্ষে অনেক কঠিন ছিলো। ধর্মপালন থেকে মানবসেবা, সত্যিই একটা সময় তাঁর মাথার ওপর পাহাড়প্রমান দায়িত্বের বোঝা চলে আসে। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। আস্তে আস্তে তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে হাজারো সংখ্যায় মানুষ যুক্ত হতে শুরু করে। খুব দ্রুতই এই খবর ভারতীয় সরকারের নজরে আসে। ভারতীয় সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জহরলাল নেহেরুও মাদার তেরেসার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। মাদার তেরেসা মনে করতেন,
“আমি একা একা এই পৃথিবীকে কখনই বদলে দিতে পারবোনা। তবে আমি অবশ্যই স্বচ্ছ পানিতে একটি ছোট পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে বিশাল বড় বড় জলতরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবো।“
৫. মাদার তেরেসার জীবনী থেকে জানা যায় যে, তিনি জন্ম থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড প্রভুভক্ত। তিনি দিনের বড় একটা সময় প্রার্থনায় মগ্ন থাকতেন, বাকি সময় মানবসেবায়। তিনি মানবসেবাকে ধর্মপালনের একটি মহৎ অংশ হিসেবেই সর্বদা গণ্য করতেন। তাঁর দর্শন ছিল,
“বিধাতা তোমাদের সফল হওয়ার নির্দেশ দেননি, এখানে তোমাদের শুধুমাত্র সর্বদা অবিরাম চেষ্টা ধরে রাখার আহ্বান করেছেন।“
তিনি তাঁর কাজকে সবসময় শ্রদ্ধা করতেন এবং একই সাথে ভরসা রাখতেন সৃষ্টিকর্তার উপর। তিনি জানতেন, কঠিন সাধনা করলে ঈশ্বর অবশ্যই একদিন মুখ তুলে তাকাবেন।
৬.
মাদার তেরেসা যে সারাজীবন নিজের অবদানের জন্য মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন, তা কিন্তু নয়। জীবনের নানা পর্যায়ে তিনি মানুষের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। সমালোচিত হয়েছেন ধর্মযাজকের নির্দিষ্ট পোশাক ত্যাগ করে সাদা শাড়ি তুলে নেয়ার সময়, সমালোচিত হয়েছেন গর্ভপাত নিয়ে সমালোচনা করায়। এমনকি অনেকে তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও সমালোচনা করতে দেরি করেনি। কিন্তু এসব কথার তীর মাদার তেরেসাকে নিজের কর্মজীবন ও মানবসেবা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এমনকি তিনি এসব মানুষকে কখনো এসব কথার জের ধরে বিচার করেননি। তাঁর জীবনী থেকে পাওয়া একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি হলো,
“মানুষকে বিচার করে করে সময় নষ্ট করতে থাকলে কখনোই তাদেরকে ভালবাসার মত সময় পাওয়া যাবে না।”
এমনকি যেসব মানুষ মাদার তেরেসার কাজের সমালোচনা করেছিলো, মাদার তেরেসা ঠিক সেসব মানুষগুলোকেই পরবর্তীতে মানবতার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
৭. আমি একটা জিনিস খেয়াল করে দেখলাম। সেটা হলো, এই ব্লগটি লেখার সময় আমি কিছুক্ষণ গুগলের এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করলাম, কিছু তথ্য সংগ্রহ করলাম, কিছু ছবি বের করলাম। হঠাৎ করে চোখে ধরা পড়লো যে, মাদার তেরেসার বেশিরভাগ ছবিতেই তাঁর হাস্যজ্জল একটা চেহারা ভেসে উঠছে। মাদার তেরেসা খুব গম্ভীর হয়ে বসে আছেন, এমন ছবি খুব কম আছে বলেই ধরে নিচ্ছি। আসলে মাদার তেরেসা নিজেও খুব হাসিখুশি একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মানবসেবার কাজের মধ্যেই তাঁর সবটুকু সুখ খুঁজে পেতেন। তিনি জানতেন, একজন অসহায় হতদরিদ্রের কাছে সামান্য হাসির মূল্য কতটুকু। তাঁর একটি মহৎ উক্তি হলো,
“তাই প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসার শুরুটা হোক হাসি আনন্দের মাধ্যমে। “
৮. ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর শতাধিক দেশে সর্বমোট ৫০০টিরও বেশি মিশনারি পরিচালনা করেছিলেন মাদার তেরেসা। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো, সময়ের ব্যবধানে সেই সংখ্যাটি কয়েক হাজারে পৌঁছায়। তারা সবাই পৃথিবীর নানা প্রান্তে মানবসেবা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। গরীবদের মাঝেও যারা গরীব, তাদের জন্য কাজ করতো এই চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। যেই শুরুটা হয়েছিল ক্ষুদ্র আকারে, আজ তা পৃথিবীব্যাপ্ত আকার ধারণ করেছে।
“আমরা সকলেই শুরুতে বিশাল বিশাল কোনো ধরনের মহৎ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট অনেকগুলো ভাল কাজ করা সম্ভব।“
একসময়ের সেই ক্ষুদ্র মানবসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এখন মাদার তেরেসা অর্গানাইজেশন এ রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত রয়েছে সেই বিখ্যাত মাদার তেরেসা সেন্টার।
৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ– ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫, এই পাঁচ বছরব্যাপী চলমান এই যুদ্ধ পুরো পৃথিবীর মানচিত্রকে যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। জার্মান হিটলার বাহিনীর হাত ধরে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ অচিরেই প্রাণ হারায়, আহতদের সংখ্যাটা অজানা থাকাই শ্রেয়। চারদিক তছনছ করে দেয়া এই যুদ্ধকালীন সময়ে পৃথিবীবাসী যেন ভুলে গিয়েছিল শান্তির প্রকৃত শব্দার্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নেতারা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীতে পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
এসময় এই পুরো ব্যাপারটা স্বয়ং মাদার তেরেসাকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলো। পৃথিবীতে এত ধ্বংসযজ্ঞ, মানুষের আর্তনাদ তাঁর মনকে ব্যথিত করে তোলে। তিনি মানুষের কাছে গিয়ে শুনেছেন যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা। তিনি মনে করতেন, অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি দরকার যেটি, সেটি হচ্ছে মানবতা।
“অস্ত্র দিয়ে কোনোদিনো শান্তিকে ঘরে আনা সম্ভব নয়, সম্ভব শুধু ভালবাসা ও সহানুভূতির হাত ধরে।“
১০.
“সবচেয়ে ভয়াবহ ধরনের দারিদ্রতা হচ্ছে একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের নিকট থেকে সহানুভূতি না পাওয়ার অনুভূতি।“
বর্তমান সময় কিশোর যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয় হলো ডিপ্রেশন। ভয়াবহ এই ব্যাধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একাকীত্ব। একজন মানুষের জীবনে একাকীত্ব যে কি পরিমান বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তা আসলে কল্পনাতীত। আমাদের মাদার তেরেসার জীবনেও এমন অনেক সময় এসেছে, যখন তিনি খুবই একাকীত্বে ভুগেছেন। অল্প বয়সেই পরিবার ছেড়ে তাকে এসে মিশনারিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাকি জীবনটা আর পরিবারকে কাছে পাননি।
উল্লেখ্য , এমনকি ১৯২৮ সালে ১৮ বছর বয়সে গৃহত্যাগের পর তিনি তাঁর মায়ের চেহারাটা আর কখনো দেখতে পাননি। তিনি কখনো কখনো অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়তেন এই একাকীত্বের জন্য। ঘরে ফেরার জন্য তাঁর মন সবসময় অনেক আনচান করতো, কিন্তু দায়িত্বের টানে কখনোই তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি তার জীবনে।
মাদার তেরেসার জীবনী আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অনেক অনুপ্রেরণারও জোগান দেয় তাঁর অসাধারণ জীবন। কিভাবে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আত্মতুষ্টি পাওয়া যায়, তারই নিদর্শন নীল পাড়ের শাড়ি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল ঐ মহীয়সী নারী। তাই বোধহয় মাদার তেরেসার প্রতিটি বাণীই যেন জয়গান গায় মানবতার, জয় হয় মানুষের।
1 thought on “অনুপ্রেরণা জাগানো সেরা ৫০টি উক্তি যা জীবন বদলে দিবে-Fifty Inspirational Quotes”