রেডিও ওয়েভ কি ? রেডিও ওয়েভ এর প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার

রেডিও ওয়েভ কি
রেডিও ওয়েভ কি

জেনেনিন রেডিও ওয়েভ কি ? রেডিও ওয়েভ কাকে বলে?

আর্টিকেল সূচী:

রেডিও ওয়েভ কি ? (Radio Wave)

৩ KHz হতে ৩০০ GHz ফ্রিকোয়েন্সির বেতার তরঙ্গকে রেডিও ওয়েভ বলা হয়।

রেডিও ওয়েভ এক ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।

রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে ব্যবহৃত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ডেটা ট্রান্সমিট করা হয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, যাকে বলা হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF)।

এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংকেত প্রেরণের গতিবেগ প্রায় কিলোবিটস সেকেন্ড (kilo bps) যা 1 মি.মি থেকে 100 কিলোমিটার এলাকায় বিস্তার লাভ করে।

রেডিও ওয়েভে প্রাপ্ত ফ্রিকোয়েন্সি সীমাকে কতকগুলো চ্যানেল বা হোফস (Hops)- এ বিভক্ত করা হয়। সিগনাল ট্রান্সমিশনের সময় এডাপ্টার নির্ধারিত ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন (Tune) করা থাকে।

এরপর ভিন্ন আরেকটি ফ্রিকোয়েন্সিতে এডাপ্টার টিউন করা হয়। এভাবে নির্ধারিত চ্যানেলে ডেটা ট্রান্সমিশন হয়।

ফলে নেটওয়ার্কিং-এর ক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পিউটার একই ফ্রিকোয়েন্সিতে সেট করা থাকে যাতে এগুলো অন্য কম্পিউটার কর্তৃক পাঠানো সিগনাল গ্রহণ করতে পারে।

 

রেডিও ওয়েভ সর্বদিকে প্রবাহিত হয় ফলে প্রেরক এবং গ্রাহক অ্যান্টেনাকে কোনো নির্দিষ্ট দিকমুখী করার প্রয়োজন হয় না। এজন্য সীমার মধ্যে যেকোনো গ্রাহক যন্ত্র এই সংকেত গ্রহণ করতে পারে।

এতে অসুবিধা হলো একই ফ্রিকুয়েন্সিতে একাধিক প্রেরক থাকলে তাদের মধ্যে ইন্টারফিয়ারেন্স (সংঘর্ষ) হয়।

রেডিও ওয়েভ অনেক দূর পর্যন্ত সংকেত নিয়ে যেতে পারে। আকাশে প্রতিফলনের মাধ্যমে পাঠানো রেডিও ওয়েভ দূরবর্তী স্থানে রেডিও সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়।

লো ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ওয়েভ দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে। এতে সুবিধা হয় যে এ রেডিও বিল্ডিং-এর ভিতর বসে শোনা যায় কিন্তু অসুবিধা হলো প্রয়োজন পড়লে ভেতর ও বাইরের যোগাযোগ আলাদা করা সম্ভব হবে না।

অ্যান্টেনার মাধ্যমে ওয়্যারলেস সংকেত প্রেরক হতে গ্রাহক পর্যন্ত কয়েকটি উপায়ে যেতে পারে। যথা:

প্রথমত, ভূমি থেকে প্রেরণ করা হয় এবং সংকেত প্রেরক অ্যান্টেনা থেকে বৃত্তাকারে ভূমির বক্রতা অনুসারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সংকেত শক্তি যত বেশি তা তত দূরত্বে অতিক্রম করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সংকেত আকাশের দিকে প্রেরণ করা হয় এবং আয়োনোস্ফিয়ার থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে তাভূমিতে ফিরে আসে।

এইভাবে অল্প শক্তি ব্যবহার করেও অনেক দূর পর্যন্ত বেতার সংকেত পাঠানো যায়।

তৃতীয়ত, বেতার তরঙ্গ দৃষ্টি রেখার মধ্যে সোজাসুজি প্রেরণ করা হয়। দুজন মানুষ যখন পরস্পরকে কোনো বাধা ছাড়াই দেখে তখন তাদের দৃষ্টির মধ্যে একটা রেখা কল্পনা করা হয়। তাকে আমরা বলি লাইন অব সাইট (Line of Sight)।

কোনো বাধা যেমন দেয়াল বা গাছ থাকলে এই রেখা কল্পনা করা যায় না। দুটি পরস্পরমুখী অ্যান্টেনার মধ্যেও এরকম রেখা কল্পনা করা যায়।

রেডিও ওয়েভের প্রকারভেদ – (Types of Radio Wave)

রেডিও ওয়েভ দুই ধরণের হয়ে থাকে। যথা: নিয়ন্ত্রিত ও অনিয়িন্ত্রিত।

নিয়ন্ত্রিত রেডিও ওয়েভ সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারে না। অনিয়ন্ত্রিত রেডিও ওয়েভ সরকারের অনুমতি ছাড়া যে কেউ ব্যবহার করতে পারে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের জন্য তিন ধরনের রেডিও ওয়েভ ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • লো-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি
  • হাই-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি
  • রেড স্পেকট্রাম।

১. লো- পথিয়ার শিভেজাল ফ্রিকোয়েন্সি (Low Power Single Frequency) বা ন্যারো ব্যান্ড ট্রান্সমিশন

লো-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি একটি অনিয়ন্ত্রিত ফ্রিকোয়েন্সি যা অল্প দূরত্বের (70 মিটার বা 230 ফুট) ট্রান্সমিশনের উপযোগী।

লো-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • অন্যান্য ওয়্যারলেস মিডিয়ার চেয়ে ন্যারো ব্যান্ড ট্রান্সমিশন সিস্টেমের খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
  • বেশিরভাগ ন্যারো-ব্যান্ড ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করা বেশ সহজ। এর এন্টেনা উপযুক্ত ফ্রিকোয়েন্সিতে শৌকরার জন্যও খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
  • ন্যারো ব্যান্ড রেডিও ট্রান্সমিশনে গতি পাওয়া যেতে পারে 1 থেকে 10 mbps।
  • এই নেটওয়ার্কে ইথারনেট নেটওয়ার্কের মতো সর্বোচ্চ কয়টি নোড রাখা যাবে সে রীতি মেনে চলা দরকার।
  • ন্যারো ব্যান্ড ট্রান্সমিশনও এটিনিউয়েশনে ভোগে। কারণ এর সিগনাল খুবই কম শক্তির।
  • ন্যারো ব্যান্ড ট্রান্সমিশনে EMI প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে আশেপাশে যদি ইলেকট্রিক মোটর কিংবা এ ধরনের কোনো যন্ত্র থাকে।

হাই-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি (High Power Single Frequency)

হাই-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সিয়ে অনেক বেশি জায়গা পর্যন্ত সিগনাল পাঠানো যায়।

হাই-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • এর ট্রান্সসিভারের দাম কম হলেও এন্টেনা ও অন্যান্য ইকুইপমেন্টের কারণে হাইপাওয়ারড সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনের খরচ বেশি পড়ে।
  • এর ইনস্টলেশন জটিল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দরকার পড়ে।
  • ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যায় 1 থেকে 10 mbps!
  • ইথারনেট নেটওয়ার্কের মতো সর্বোচ্চ নোড সংখ্যা হতে পারে।
  • এ ট্রান্সমিশনে এটিনিউয়েশন অনেক কম হয়। রিপিটার ব্যবহার করে সিগনালকে অনেক দূর পর্যন্ত পাঠানো যায়।
  • ন্যারো ব্যান্ডের মতোই এখানেও EMI প্রভাব ফেলে এবং ইভসড্রপিংয়ের সমস্যা থাকে।

স্প্রেড স্পেকট্রাম (Spread Spectrum)

সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনে কেবল একটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়, আর স্প্রেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনে একসাথে একাধিক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হতে পারে।

স্প্রেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্য

  • অন্যান্য ওয়্যারলেস মিডিয়ার চেয়ে এখানে খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
  • ব্যবহৃত ইকুইপমেন্টের উপর ভিত্তি করে ইনস্টলেশন মোটামুটি কঠিন হতে পারে।
  • কম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হয় বলে স্প্রেড স্পেকট্রাম ট্রান্সমিশনে এটিনিউয়েশন বেশি।
  • এতে EMI প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই, তবে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগনাল ট্রান্সমিট হয় বলে ইভসড্রপিং ঘটে না।

রেডিও ওয়েব এর ব্যবহার

  • দূরবর্তী স্থানে শব্দ এবং স্পন্দিত ছবি প্রেরণের জন্য বেতার কেন্দ্র হতে রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়।
  • টিভি সম্প্রচার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ডিভাইস বা অণুতরঙ্গ যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেডিও আস্ট্রোনমি, মোবাইল ফোন, ওয়াইফাই, ব্লু-টুথ, জিগবি, জিপিএস এবং ত্রিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন: ল্যান্ড মোবাইল, FRS এবং GMRS রেডিও, অ্যামেচার রেডিও, স্যাটেলাইট বেতার ইত্যাদি।

সর্বশেষ

রেডিও ওয়েভ কি বা রেডিও ওয়েভ কাকে বলে (What is Radio Wave in Bangla) এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।

রেডিও ওয়েভ এর প্রকারভেদ, রেডিও ওয়েভ এর সুবিধা, অসুবিধা ও ব্যবহার সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।

 

এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কিছু বাংলা কোষগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a comment