Contents
- 1 আমরা গত বছর এক লাখ ফ্রিজ রপ্তানি করেছি
- 1.0.1 উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সেটি আপনাদের ব্যবসায়ের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে?
- 1.0.2 ডলারের উচ্চ মূল্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসার খরচ কেমন বেড়েছে? এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
- 1.0.3 দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও ফ্রিজ রপ্তানি করছে ওয়ালটন। রপ্তানিতে কেমন করছেন আপনারা?
- 1.0.4 নতুন করে রেফ্রিজারেটর খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে কি না?
আমরা গত বছর এক লাখ ফ্রিজ রপ্তানি করেছি
দুই ঈদের সময় দেশে ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলোও এ সময় বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে এবার দেশের ফ্রিজের বাজারের কী পরিস্থিতি, তা নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে প্রথম আলো। বিশেষ এই আয়োজনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এস এম মাহবুবুল আলম।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সেটি আপনাদের ব্যবসায়ের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে?
এস এম মাহবুবুল আলম: করোনার পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়ে। জ্বালানিসহ ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের অন্যান্য শিল্প খাতের মতো দ্রুত অগ্রসরমাণ ইলেকট্রনিক শিল্পের প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে গত বছর দেশীয় ইলেকট্রনিক খাতের সামগ্রিক ব্যবসা প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যদিও এ বছর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে খাতটি।:
ডলারের উচ্চ মূল্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসার খরচ কেমন বেড়েছে? এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
এস এম মাহবুবুল আলম: পরিবহন থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস, ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিসহ প্রায় সব শিল্প খাতে ডলারের উচ্চ মূল্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। এর ওপর ফ্রিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরির প্রাথমিক যেসব কাঁচামাল আমাদের কিনতে হয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে। ফলে ফ্রিজের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তারপরও বিশেষ কয়েকটি কৌশল নিয়ে আমরা পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি। কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মুনাফার পরিমাণ কমানো, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প উপকরণ ব্যবহার, প্রক্রিয়াগত উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ–সাশ্রয় ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এ ছাড়া আমরা কখন কোন উপকরণ আনতে হবে তার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি.
দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও ফ্রিজ রপ্তানি করছে ওয়ালটন। রপ্তানিতে কেমন করছেন আপনারা?
এস এম মাহবুবুল আলম: ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ইরাক, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, অস্ট্রিয়াসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরোপের ৪০টির বেশি দেশে রেফ্রিজারেটরসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রপ্তানি করছে ওয়ালটন। গত অর্থবছরে প্রায় এক লাখ ইউনিট ফ্রিজ রপ্তানি করেছি আমরা। ২০২৬ সালের মধ্যে তিন লাখ ইউনিট ফ্রিজ রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে রপ্তানি সম্প্রসারণে কাজ করছি আমরা। সে জন্য সুদক্ষ ও চৌকস গ্লোবাল বিজনেস টিম গঠন করেছি। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি ও শাখা কার্যালয় স্থাপন করেছি। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করেছি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারসংবলিত পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া এবং ক্রেতাদের চাহিদা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিষয়েও গবেষণা চলছে। এ ছাড়া ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী তিনটি ইউরোপীয় ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড এখন ওয়ালটনের। ব্র্যান্ড তিনটি হলো এসিসি, জানুসি ইলেকট্রোমেকানিকা ও ভার্ডিকটার। ইউরোপীয় এই তিন ব্র্যান্ডের কম্প্রেসর, ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে ওয়ালটন।
নতুন করে রেফ্রিজারেটর খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে কি না?
এস এম মাহবুবুল আলম: গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাইটেক হেডকোয়ার্টার্সে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ফ্রিজ ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি। কারখানাটির বছরে প্রায় সাড়ে ৩৫ লাখ ফ্রিজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এই সক্ষমতার সিংহভাগই আমরা ব্যবহার করছি। উৎপাদন সক্ষমতার পুরাটাই ব্যবহারে রপ্তানি বাজার বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে ছোট পরিবার, ব্যাচেলর, ফার্মেসি, হাসপাতাল, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকানে ব্যবহারের উপযোগী সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আইসক্রিম ফ্রিজার, বেভারেজ কুলারের মতো বাণিজ্যিক ফ্রিজের দেশীয় বাজারেরও সিংহভাগ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছি। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত ৮০০ থেকে ১ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ফ্রিজার তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। রেফ্রিজারেটর খাতের অটোমেশন, পণ্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করছি আমরা। চতুর্থ শিল্পবিল্পবের নতুন নতুন যে অটোমেশন প্রযুক্তি আছে, সেগুলোর ব্যবহার বাড়াতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।